ডা. আবদুল্লাহ শাহরিয়ার :
ফুডপয়জনিং বা খাদ্যে বিষক্রিয়া সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা। তবে রোগটিকে মামুলি মনে করার কোনো অবকাশ নেই। সাম্প্রতিক কালে ফুডপয়জনিংজনিত কারণে বিসিসিবির একজন কর্মকর্তা, চিকিৎসক ও নার্স মৃত্যুবরণ করায় রোগটি নিয়ে জনমনে এক ধরনের ভীতির সঞ্চার হয়েছে। তবে এসব ক্ষেত্রে মৃত্যু খাবারে অ্যালার্জিজনিত এনাফাইলেকটিক শক নাকি ফুডপয়জনিংজনিত ডায়রিয়া থেকে কিডনি বিকল হয়ে যাওয়ার কারণে হয়েছে সে ব্যাপারটি যাচাই করে দেখতে হবে। তবে আমাদের দেশে এমন কোনো মানুষ নেই যে এই সমস্যায় এক বা একাধিকবার আক্রান্ত হয়েছেন।
সাধারণত রাস্তা বা হেটেলের বাসি খাবার, পচা খাবার, অস্বাস্থ্যকর, জীবাণুযুক্ত খাবার, অনেকক্ষণ গরমে থাকার ফলে নষ্ট হয়ে যাওয়া খাবার খেলে ফুডপয়জনিং হওয়ার আশঙ্কা থাকে। বন্যার সময় পানীয় জলের অভাব, হাওর-বিল-বাঁওড়ের পচা মাছ এসবের কারণে ফুডপয়জনিং জটিল আকার ধারণ করে। এ অবস্থাকে আমরা পেটের পীড়া বলে থাকি।
বিজ্ঞানের পরিভাষায় কোনো খাবার খেয়ে বার বার বমি, পাতলা পায়খানা, জ্বর, পেট ব্যথা এগুলো শুরু হয় তাকে ‘ফুডপয়জনিং’ বলে। ছোট-বড় সবাই এ ধরনের সমস্যায় আক্রান্ত হতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে খাবার স্বাস্থ্যসম্মত থাকলেও, যেসব পাত্রে পরিবেশন করা হয় তা অপরিষ্কার থাকায় জীবাণুমুক্ত হয় না। এসব পাত্রে খাবার পরিবেশন করা হলেও ফুডপয়জনিং হতে পারে। গরমের কারণে দেহের ভেতরে পানির চাহিদা বেড়ে যায়। এ জন্য হয়তো অনেকেই রাস্তার তৈরি শরবত খেয়ে ফেলেন। এ থেকে ফুডপয়জনিং হতে পারে। এ ছাড়া গরমে নিজের ঘরের খাবারও যদি অনেকক্ষণ ধরে বাইরে রাখা থাকে তাহলে সেগুলো নষ্ট হয়ে যেতে পারে। অনেক সময় মাইক্রোওয়েভে গরম করলেও ক্ষতিকর জীবাণু বিনষ্ট হয় না। এ থেকেও ফুডপয়জনিং হতে পারে। বিভিন্ন ধরনের জীবাণু দ্বারা ফুডপয়জনিং হতে পারে। তবে খাদ্যে বিষক্রিয়ার কারণ যাই হোক না কেন লক্ষণগুলো অনেকটা একই থাকে।
সাধারণত ফুডপয়জনিং হলে পেটে ব্যথা, হজমে সমস্যা, ডায়রিয়া, বমি অনেক ক্ষেত্রে জ্বর হতে পারে। অনেক সময় ফুডপয়জনিং ও ডায়রিয়া আলাদা করা যায় না।
চিকিৎসা
ফুডপয়জনিং হলে প্রথমত খাবার-দাবার খাওয়ার ব্যাপারে সতর্ক হতে হবে। আক্রান্ত ব্যক্তিকে নরম খাবার দেওয়া ভালো। এ ছাড়া লক্ষণ অনুযায়ী চিকিৎসা দেওয়া উচিত।
যেমন- জ্বর হলে প্যারাসিটামল, বমি ও পাতলা পায়খানা হলে খাবার স্যালাইন দেওয়া যায়। পাশাপাশি ফুডপয়জনিংয়ের তীব্রতা অনুযায়ী উপযুক্ত অ্যান্টিবায়োটিক বা জীবাণুনাশক ওষুধ সেবন করলে দ্রুত ফুডপয়জিংয়ে আক্রান্ত ব্যক্তি নিরাময় লাভ করতে পারেন। অনেক ক্ষেত্রে একধরনের টক্সিন (এনথ্রাক্স, বোটুলিমিনাস টক্সিন) থেকেও ফুডপয়জনিং হতে পারে।
সময়মতো এ রোগের চিকিৎসা করা না হলে শরীরে ভীষণ পানিশূন্যতা দেখা দিতে পারে। এ থেকে রোগীর কিডনি অকেজো হয়ে পড়তে পারে। যা কি-না মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
প্রতিরোধের উপায়
– রাস্তার খোলা খাবার খাবেন না।
– পানি ফুটিয়ে খেতে হবে।
– বাসন-কোসন ভালোভাবে ধুতে হবে।
– খাওয়ার আগে হাত ভালো করে ধুতে হবে।
– দুধ, কলা, ফলমূল বেশি দিন পুরনো হয়ে গেলে খাবেন না।
– গরমের সময় হোটেলের খাবার এড়িয়ে যাওয়াই ভালো। কেননা অনেক হোটেলেই স্বাস্থ্য সচেতনতার বিষয়টি লক্ষ্য রাখা হয় না।
– যতটা সম্ভব টাটকা খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন। কয়েকদিন ধরে ফ্রিজে রাখা আছে এমন খাবার খাওয়া ঠিক নয়।
– খাবার ঠিকমতো ঢেকে রাখুন, নয়তো বিভিন্ন ধরনের কীটপতঙ্গ খাবারে বসে জীবাণু ছড়াতে পারে।
লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, এনআইসিভিডি
পাঠকের মতামত